Saturday 13 April 2013

মহাবিশ্বের বয়স বাড়ল ৮ কোটি বছর

নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, মহাবিশ্বের বয়স আগে যা ভাবা হতো তারচেয়ে ৮ কোটি বছর বেশি। ২০০৯ সালে মহাকাশে উৎক্ষেপিত একটি স্পেস টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে ইউরোপের একদল বিজ্ঞানী বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছেন।
এটি সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব তত্ত্বকে আরো বিকশিত করবে। তত্ত্বটি বিজ্ঞানীদের কাছে ইনফ্লেশন নামে পরিচিত। যে তত্ত্বে বলা হয় এই মহাবিশ্ব একটি অতিপারমানবিক কণার বিস্ফোরণের পর সেকেন্ডের মাত্র একটি ভগ্নাংশ সময়ে বর্তমান দৃশ্যমান অবস্থায় বিস্তৃতি পেয়েছে। তবে মহাবিশ্ব সস্পর্কে মৌলিক প্রশ্ন যেমন: এর শুরু, এর গাঠনিক উপাদান, এবং এর পরিণতি- এসব ব্যাপারে প্রচলিত ধারণাগুলো এখনো সঠিক জায়গায় আছে বলেই মনে করেন বিজ্ঞানীরা। বিগব্যাঙ এখন পর্যন্ত মহাবিশ্ব সৃষ্টির সবচেয়ে বোধগম্য তত্ত্ব। এ তত্ত্ব অনুযায়ী, এই মহাবিশ্বের দৃশ্যমান অংশ একসময় একটি পারমাণুর চেয়েও ক্ষুদ্র ছিল। কিন্তু যখন এটি বিস্ফোরিত হলো এটি অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে শীতল হয় এবং আলোর চেয়ে বেশি বেগ নিয়ে বিস্তার লাভ করতে থাকে।দ্য ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ‘প্ল্যাংক স্যাটেলাইট’ বিগব্যাঙ পরবর্তী অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করেছে এবং ওই ফলাফল থেকে বিজ্ঞানীরা অনেকটা নিশ্চিত হয়েছেন, মহাবিশ্বের বয়সের সঙ্গে আরো ৮ কোটি বছর যোগ করে হালনাগাদ বয়স দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৮১ কোটি বছর।
ওই মহাকাশযান ‘প্ল্যাংক স্যাটেলাইট’ আরো দেখেছে যে,আগে যা জানা ছিল মহাবিশ্ব তার চেয়ে ধীর গতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে। এমনকি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের হিসাবে এতোদিন ডার্কম্যাটারের যে পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছিল তাও কিছুটা কম। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির কাভলি ইনস্টিটিউট ফর কসমোলজির ডিরেক্টর জর্জ এফস্ট্যাথিও বলেন, “আমরা মহাবিশ্বের একটি মৌলিক সত্য উদ্ঘাটন করেছি। আমাদের মহাসাগরগুলোর তলদেশ কেমন সে সম্পর্কে আমরা যতটুকু জানি মহাবিশ্ব সম্পর্কে তাত্ত্বিকভাবে আমাদের জ্ঞান তারচেয়ে বেশি”। আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের আলোকে মহামহাকাশ টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া শব্দের প্রতিধ্বনি এবং তথাকথিত আলোক জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেন। তবে এ সংশোধিত পরিমাণ মহাবিশ্বের জন্য উপেক্ষাযোগ্য বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
প্ল্যাংক স্যাটালাইটের তৈরি মানচিত্রের প্রকাশক ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজের কাভলি ইন্সটিটিউট অব কসমোলজির পরিচালক জর্জ এস্ফথাথিউ বলেন, “আমরা মহাবিশ্বের একটি মৌলিক সত্য উদঘাটন করেছি”। নতুন এ গবেষণায় অংশ না নেয়া কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী ব্রিয়ান গ্রিনি বলেন, “প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করার এটি একটি অসাধারণ গাণিতিক অগ্রগতি। এটি আবিষ্কারের এক বিস্ময়কর গল্প”।
৯০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত প্ল্যাংক মহাকাশ টেলিস্কোপ ২০০৯ সালে মহাকাশে পাঠানো হয়। এটি সাড়ে ১৫ মাস মহাশূন্যে কাটিয়েছে। এর সময়ের মধ্যে এটি তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপ করে মহাশূন্যের মানচিত্র তৈরি, বিগব্যাঙের অব্যবহিত আলোকরশ্মি এবং শব্দ-প্রতিশব্দ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। আশা করা হচ্ছে, ২০১৩ সালের শেষ নাগাদ পর্যপন্ত এটি তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করতে থাকবে। এই গবেষণায় অংশ নেয়া নাসার কর্মকর্তারা বলেন, প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত মহাবিশ্বের জটিল ইতিহাস এবং গঠন বুঝতে সাহায্য করবে।

No comments:

Post a Comment

Blogger Widgets